মায়ের কষ্টের টাকায় লেখাপড়া করে বিসিএস ক্যাডার হলেন নূর আলমঃ কুয়াকাটা খানাবাদ কলেজের আয়া আম্বিয়া বেগমের ছেলে বিসিএস কর্মকর্তা হয়ে মায়ের স্বপ্ন পূরণ করেছেন, কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও বিসিএস কর্মকর্তা নুর আলমের এমন সাফল্যে গর্বিত, মায়ের অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর লড়াইয়ের কারণেই এখন নুর আলম বিসিএস ক্যডার। একমাত্র পুত্র সন্তান নুর আলমের জন্মের পর পরই সংসার ভেঙে যায় আম্বিয়া বেগমের, চাকরির টাকায় ছেলেকে লেখাপাড়া শেখাবেন এমন অদম্য সাহস শক্তি নিয়ে জীবনযুদ্ধে নেমেছিলেন মা আম্বিয়া।
বিনা বেতনে কুয়াকাটা খানাবাদ ডিগ্রি কলেজের (এমএলএস) চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী পদে যোগদান করেন। ছেলে অষ্টম শ্রেণিতে পড়াশুনা করার সময় ১ হাজার ৪০০ টাকা বেতনভাতা পেতে শুরু করেন। পুরো টাকাই ব্যয় করতেন ছেলের পড়াশুনা ও ভরণপোষণে। নুর আলমের প্রবল ইচ্ছা আর মনোবল মা আম্বিয়াকে আরও উদ্যামী করে তোলে।সন্তান বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যয় বাড়তে থাকলে কলেজে চাকরি শেষে বিকেলে ও রাত জেগে জাল বুননের কাজ করতে শুরু করেন।

এমনই হতদরিদ্র রত্মাগর্ভা মায়ের সন্তান নুর আলম
২০০৬ সালে মহিপুর কোঅপারেটিভ মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৪.৩৮ পান। উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হন মায়ের কর্মস্থল কুয়াকাটা খানাবাদ কলেজে। ব্যবসা শিক্ষা শাখা থেকে ২০০৮ সালে জিপিএ-৫ পান। মায়ের সামান্য আয়কে সম্বল করে এক পোশাকে ঢাকায় এসে ওঠেন নুর আলম।বিশ্ববিদ্যালয় কোচিং করা নুর আলমের সামর্থ্যের বাইরে ছিল। তাই ভর্তি পরীক্ষার বই কিনে পড়াশুনা করেন। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরম কেনার সামর্থ্য না থাকায় মেধা তালিকায় জায়গা করে নেন ঢাকা কলেজে।
পরে মায়ের বেতন বৃদ্ধি পেয়ে ৮৫০০ টাকা হলে সবটুকু টাকাই সন্তানের পড়াশুনা ও থাকা খাওয়ার জন্য ব্যয় হতে থাকে, বাবার বাড়িতে আশ্রয় নেয়া আম্বিয়া দীর্ঘ ২০ বছর ধরে প্রতিদিন দুই কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করে কর্মস্থলে পায়ে হেঁটে আসা যাওয়া করতেন। মায়ের অপ্রতুল আয়ের পুরো টাকাই পড়াশুনায় ব্যয় করে বিবিএ ও এমবিএ ম্যানেজমেন্ট বিভাগ থেকে ফার্স্টক্লাস পান। এতে নুর আলমের ভীত আরো মজবুদ হয়।২০১৪ সালে এমবিএ পাস করলে নানা প্রতিকূলতা পেছনে ফেলে পুরোপুরি মনোনিবেশ করেন বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিতে।
বিসিএসসের প্রথম আবেদন
২০১৭ সালে ৩৮তম বিসিএসসের প্রথম আবেদন করে, ৩৮তম বিসিএস পরীক্ষার প্রিলিমিনারি, লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। ২০২০ সালে নভেম্বর নুর আলম মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেন।সরকারি কর্মকমিশন (পিএসসি) ৩০ জুন ৩৮তম বিসিএস পরীক্ষার ফলাফলের প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করলে নুর আলমের নাম আসে। এমন খবরে আনন্দে আবেগআপ্লুত হন মা আম্বিয়া বেগম, নানী ও তার নিকট আত্মীয়সহ মায়ের কর্মস্থলের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী।৩৮তম বিসিএস কর্মকর্তা নুর আলমের বাড়ি পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া
নুর আলমের শৈশব ও কৈশোর
উপজেলার মহিপুর থানার কুয়াকাটার আলীপুর গ্রামে। নুর আলমের দূরত্ব শৈশব ও কৈশোর কেটেছে আলীপুর বাজারে নানা বাড়িতেই। স্কুল কলেজে বরাবরই প্রথম ছিলেন নুরআলম।জীবন যুদ্ধে জয়ী হওয়া নুর আলমের গল্প শুনতে তার নানার বাড়িতে গেলে নুর আলম বলেন, মা আমার কাছে স্বর্গ, মায়ের আশির্বাদ ও ত্যাগ আমার জীবনে এ সফলতা বয়ে এনেছে। কান্নায় চোখ ভিজে যাওয়া ত্যাগী মায়ের সন্তান নুর আলম বলেন, মা খেয়ে না খেয়ে সব সময় ছেলেকে উচ্চ শিক্ষিত করার স্বপ্ন দেখতেন। ছেলের এমন সফলতার খবরে মা আম্বিয়া বেগম নফল নামাজ আদায় করেছেন বলে তিনি জানিয়েছেন।
নুর আলমের কষ্টের দিনগুলি
আর্থিক কষ্টের কারণে ছেলেকে ভালো খাবার ও পোশাক দিতে না পারার অপরগতার কথা স্বীকার করেছেন তবে মা আম্বিয়া ছেলের এমন সফলতায় খুশি হয়েছেন এ বিষয়ে কুয়াকাটা খানাবাদ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ সিএম সাইফুর রহমান বলেন, নুর আলম আমাদের প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা শিক্ষা শাখা থেকে প্রথম জিপিএ ৫ পেয়েছিল। ওর ধারবাহিক এ সফলতায় এ প্রতিষ্ঠান গর্বিত।তথ্যসূত্রঃ ভোরের কাগজ (প্রকাশিত হয়েছে: জুলাই ২, ২০২০)
জবের প্রিপারেশনমূলক পোষ্ট পেতে আমাদের সাথেই থাকুন এবং ভিজিট করুন প্রাইমারী প্রিপারেশন